বাংলাদেশের নির্বাচনে বিদেশের দুরবিন
বাংলার জমিন ডেস্ক :
আপলোড সময় :
০৩-১২-২০২৩ ০৪:৩৪:১৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৩-১২-২০২৩ ০৪:৩৪:১৩ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য প্রায় ১২ কোটি ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অবশ্য তালিকাভুক্ত হওয়া মানে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়া নয়। দেশের এক কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকে, যাদের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার।
কয়েক লাখ মানুষ হাসপাতালে আছে, যাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বার্ধক্যজনিত কারণেও অনেকে ভোট দিতে যেতে পারবেন না। দেশের কারাগারে আছেন ৫০ হাজারের বেশি কয়েদি। সুতরাং প্রকৃত অর্থে সম্ভাব্য ভোটারের সংখ্যা কম করে হলেও এক কোটি কমে যাবে।
দেশের নির্বাচনে বিদেশের দুরবিনস্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত দেশে ১১টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনেই কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশের প্রথম সেনাশাসক জেনারেল জিয়া নিজের সঙ্গে নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
তাঁকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পছন্দ হলে 'হ্যাঁ' বাক্সে ভোট দিতে হবে আর না হলে 'না' বাক্সে। মজার ব্যাাঁর হলো অনেক কেন্দ্রেই 'না' ভোটের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দিন শেষে জানা গেল দেশের শতভাগ ভোটার জিয়াকে 'হ্যাঁ' বলে তাঁর সামরিক শাসনকে 'হালাল' করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কারো কোনো অভিযোগ জানানোর সুযোগ ছিল না। ভোট নামক এসব নৈরাজ্য নিয়ে তখন বিদেশি মুরব্বিদের কোনো অশোভন দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়নি।
পশ্চিমের তথাকথিত গণতন্ত্রের রক্ষাকারীদের কাছে রাজতন্ত্র আর সেনাশাসন সব সময় পছন্দের। কারণ তখন তাদের স্বার্থ উদ্ধারের সুবিধা হয়। গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কিছু পুরনো গোপন দলিল অবমুক্ত করে জানিয়েছে, ১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত ড. মোসাদ্দেক সরকারকে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সহায়তায় উৎখাত করেছিল। এর পর থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ইঙ্গ-মার্কিন তেল কম্পানিগুলো ইরানের শাহর সঙ্গে যৌথভাবে সেই দেশটির তেল সম্পদ লুট করেছে। ১৯৭৯ সালে ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের পর তা বন্ধ হয়েছে। কোনো রাখঢাক ছাড়া দেশে এমন তৎপরতার ষড়যন্ত্র এখনো চলে আসছে।
এ দেশে নির্বাচন নামক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জিয়াই নষ্ট করেছেন। জিয়াই বাংলাদেশে প্রথম রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের রেওয়াজ চালু করেন। সেই সময় আওয়ামী লীগ মালেক উকিলের নেতৃত্বে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে নির্বাচন কমিশন তাঁকে নিবন্ধন দিতে অস্বীকার করে। কারণ নিবন্ধনের জন্য দলিলে বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ ছিল। পরে নিবন্ধনের জন্য আবার আবেদন করতে হয়।
১৯৭৮ সালে জিয়া সেনা গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বিএনপি নামক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে জিয়া একটি সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন। নির্বাচনের ফল তাৎক্ষণিক প্রচার না করে পরদিন প্রচার করে জানিয়ে দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসনে 'জয়ী' হয়েছে। ১৯৮৮ সালে দেশের দ্বিতীয় সেনাশাসক জেনারেল এরশাদ সংসদ নির্বাচন করেছিলেন, যা দেশের সব বিরোধী দল বর্জন করেছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম জাসদের আ স ম আবদুর রব। তিনি ৭০টি টোকাই দলকে একত্র করে একটি 'বিরোধীদলীয় জোট' গঠন করেছিলেন। সেই জাসদ বর্তমানে 'হাসিনা হটাও' আন্দোলনে ব্যস্ত। ১৯৭০ সালে আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করে নিজের জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার জাসদের নেতারা সভা করলেন ইসলামের ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
৭ জানুয়ারিকে সামনে রেখে দেশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ৩০টি দল অংশ নিচ্ছে। ৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। নিবন্ধিত দলগুলোর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৯৬৪। সঙ্গে আছে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বড় দলগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। এই দুটি দল মিলে দেশের আনুমানিক ৫০ শতাংশের মতো ভোটারের সমর্থন পায়। এই দুটি দল বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাটা ছিল নির্বাচনের মাধ্যমে আর জাতীয় পার্টিও ক্ষমতায় বসেছিল সামরিক শাসক এরশাদের ছত্রচ্ছায়ায়, অনেকটা জিয়ার আমলে বিএনপির ক্ষমতায় থাকার মতো। খালেদা জিয়ার আমলে বিএনপি যে পূর্ণ দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল, তাতে একটি বড় অবদান ছিল বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতে ইসলামীর। কখনো তারা গোপন আঁঁতাতে নির্বাচন করেছে, কখনো জোটবদ্ধ হয়ে আসন ভাগাভাগি করে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Jamin
কমেন্ট বক্স